মেঘ

মেঘ
মেঘ, সুনিদ্রা ও নন্দলালের পঙ্গপাল

বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৪

তুমি ছাড়া বাচিনা: সিনেমা না অস্থির এক ছি:নেমা

ল টু ছাল ভায়া *ল, সে সিনেমাই হোক আর ছি:নেমা অথবা এখনো বহু মানুষের কাছে যেগুলো ‌'বই' নামে পরিচিত, মোট কথা একটা সিনেমা জাতীয় কিছু তৈরি হতে পারলেই আমি তার দর্শক। আর সবচে আশার কথা হলো এই যে, ভয়ানক ইনটেলেকচুয়্যাল বিদেশি ভাষার আর্ট ফিল্মগুলো বাদে সবই আমি সেইরাম ইনজয় করি।

যাই হোক কথা হচ্ছে কী আসলে এই তুমি ছাড়া বাচিনা। এটি একখানা ভয়ানক রোম্যান্টিক সিনেমা ছি:নেমা। এতে অভিনয় করেছেন (আমার চেনা) হুমায়ুন ফরিদী, আমিন খান, টেলি সামাদ। নায়িকার নামটা যতদুর মনে পড়ে সানাই।

সেই সালমান শাহ-ওমর সানীর আমলে বাংলা সিনেমাগুলো যেভাবে শুরু হতো, সম্ভবত ২০০৯ সালে নির্মিত তুমি ছাড়া বাচিনারও শুরু ঠিক একইরকম। সেই লোগ্রাফিক ক্রেডিটলাইন তো আছেই।


এই সিনেমাটার ছি:নেমাটার মূল কাহিনীটা এইরকম- হুমায়ুন ফরিদী ট্রেনে করে কোথাও যাচ্ছে। তার সঙ্গে একটা ব্যাগ। ব্যাগের মধ্যে একটা বাচ্চা। বাচ্চাটা কেন ব্যাগে তার কোনো উত্তর সিনেমাটা ১০০০বার দেখেও পাওয়া যাবে না। যাই হোক, আবার গল্পে ফিরে আসা যাক। তো চুরি করতে সেই ট্রেনে উঠলো টেলি সামাদ। তারপর সেই ব্যাগটা চুরি করে নিয়ে চলে গেল। এরপর বাসায় গিয়ে দেখল ব্যাগে বাচ্চা। ব্যাস শুরু হয়ে গেল বাচ্চা মানুষ করার পালা।

তারপর বাচ্চাটা দৌড়াতে দৌড়াতে বড় হয়ে গেল। একদম বড় না, ১০-১২ বছর হবে (ভুলও হতে পারে আমি বয়স বুঝতে পারি না; একটু বয়সান্ধ টাইপ আছি আর কী)। এরমধ্যে বাচ্চা হারানোর শোকে তো অস্থির হুমায়ুন ফরিদী। সে গিয়ে কাজ নিল বড়লোক এক শিল্পীর বাসায়- যার মেয়েই এই সিনেমার নায়িকা।





ভাগ্যের খেলায় একদিন হঠাত টেলিসামাদ সেই বাসার সামনে এসে হুমায়ুনকে বললো, তার ছেলেটাকে কাজ দিতে। হুমায়ুন রাজি হয়ে গেল। রাজি হয়ে গেল বাসার মালিকও। তারপর মালিকের মেয়ে আখি আর নয়ন তো বন্ধু হয়ে গেল। এবার হঠাত অসুস্থ আখি। তার লাগবে রক্ত। কে দেবে, কে দেবে করতে নয়ন ভয়াবহ কিছু ডায়লগ ঝেড়ে ডাক্তারকে রাজি করিয়ে ফেললো রক্ত দেয়ার জন্য।

এই সিনেমা ছি:নেমা মতে, নয়ন তার শরীরের সব রক্ত দিয়ে আখিকে বাচিয়েছিল। আসলে এটা সম্ভব হলে বেশ তো; বলতেই হয়- ভালো তো, ভালো না! এরমধ্যে আবার আখিদের বাসায় হয়ে গেল ২০ লাখ টাকা চুরি। চুরির দায় আসলো নয়নের ওপর। নয়নকে মেরে খুনতির ছ্যাকা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়া হলো। ফরিদীও চলে গেল নয়নের সাথে। আখিকে রক্ত দেয়ার কথা শুনে সে তো অবাক। সিদ্ধান্ত নিল নয়নকে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে। নাম পাল্টে দিল। নতুন নাম রাখলো জীবন।

এবার বড় হয়ে গেল জীবন আর আখি। চড়-থাপ্পড়, শত্রুতা, জোর করে চুমাচুমি এইসব টিপিক্যাল সিনেমাগুলোতে যা হয় আর কী। তারপর জীবনের গান শুনে তো আখি অবাক- পুরাই টিনের চালে কাকের মতো। এবার হাল্কা হাল্কা প্রেম। তারপর গাড় প্রেম। ততদিনে আখির প্রতি প্রেম জেগে উঠেছে আর এক বড় ব্যবসায়ীর, সে সম্ভবত আখির ক্লাসমেটও।

তো এই লোক শত্রুতা করে জীবনকে লম্পট সাজিয়ে দিল আখির চোখে। জীবন তো এবার মদ খেয়ে পুরাই মাতাল। ঠেকাই কে? এরমধ্যে আবার জীবন একদিন আখিদের বাসায় গিয়ে চিনে ফেললো এই আখি তো তার 'ছোটবেলার খেলার সঙ্গী'। তাই আখির বাপের ৫০ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ শোধ করে দিল জীবন। এই ঋণ আবার ২০ বছর আগে আখির বাবা নিয়েছিল; যা চুরির দায়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল ততকালীন নয়নকে।

এবার আবার অসুস্থ আখি। এবার তার দুটি কিডনিই শ্যাষ। কে দেবে কিডনি কে দেবে কিডনি করতে করতে রাজি হয়ে গেল জীবন। তখন আবার মদ খেয়ে খেয়ে জীবনের গলায় ইনফেকশন হয়ে গেছে। ডাক্তার তো তাই রাজি না।

শেষ পর্যন্ত ডাক্তারও রাজি হয়ে গেল। কিডনি দেয়া হয়ে গেল। আখি সুস্থ হয়ে গেল। জীবনের আসল পরিচয় পেল। প্রেম আবার শুরু হয়ে গেল। সিনেমা শেষ। দ্যা এন্ড।

এখন এই সিরিয়াস গল্পের সিনেমাটা ছি:নেমাটা দেখে আমি কিন্তু ব্যাপক মজা পেয়েছি। স্পেশালি এর ডায়ালগগুলো। কে বলছে, কী বলছে কোনো হিসাব নেই। বলতে হবে পরিচালক মশাই বলাই দিয়েছেন।

একটা উদাহরণ দেয়া যাক। নয়ন আর আখি তখন ছোট। একটা গাছের সবপাশে গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে ওরা ধরাধরি খেলছে। হঠাত অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল আখি। নয়ন তাকে টেনে তুললো। এবার আখি- 'আমার কিছু হলে তুমি এতো অস্থির হয়ে যাও কেন নয়ন?' এবার নয়ন- ডায়লগটা হুবুহু আমার মনে নেই। তোমার লাগলে ব্যাথা যে আমাকে বেশি কষ্ট দেয় জাতীয় কিছু একটা জবাব দিয়েছিল ব্যাটা। টোটাল ইচড়ে পাকা।

হাস্যকর দৃশ্যের তো কমতি ছিল না ওখানে। উদা- জীবন আর আখির ছোটকালে রক্ত দেয়া-নেয়ার সময়টাতে দেখা গেল সবাই অপেক্ষা করছে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে। আরে শালা অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন হয়। কেউ রক্ত দেয় না।

সিনেমার ছি:নেমার শুরুতেই হুমায়ুন ফরিদী যে কেন ব্যাগে করে তার বাচ্চাকে নিয়ে যাচ্ছিল তা তো বুঝলামই না।

আর একটা দৃশ্যে দেখা যায়, আখি- তখন বড় হয়ে গেছে- একটা পার্ক জাতীয় কোথাও বসে জীবনের জন্য অপেক্ষা করছে। এইসময় দুষ্ট লোকেরা এসে আখিকে উত্যক্ত করতে শুরু করে।

আখি- কী চাও?
দুষ্ট লোকেরা- চাই তো পাহাড়ি ফুল।
আখি- তাহলে পাহাড়ে যাও। (যে এক্সপ্রেশন দিয়ে এই ডায়লগটা আখি দিল আমি তো পুরাই ফ্যান হয়ে গেলাম।) ২৪ ঘণ্টা পরও এই দৃশ্যটা মনে পড়লে হাসি আসছে।

প্রায় শেষের দিকে একটা দৃশ্যে দেখা যায় ফরিদী তার ছেলে জীবনের উপর রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বাইরে গিয়ে একটা সিএনজির ধাক্কা খেয়ে হুমায়ুন তার কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ওইদিনই বা ঠিক তার পরদিনই আবার হারানো ক্ষমতা ফিরে পায় সে। কী প্রয়োজন ছিল এই দৃশ্যের তাও আমি বুঝিনি।

যাই হোক সব মিলিয়ে বস্তা বস্তা ইমোশনের ছড়াছড়ি, বাংলা ১ম পত্রের মতো ভাষা আর সখিটখি মেলালে ২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের এই সিনেমাটা ছি:নেমাটা দেখলে সময়ের পুরাটাই অপচয় কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু মজা নিতে পারলে কিন্তু চখা একটা সিনেমা এই 'তুমি ছাড়া বাচিনা'।

তবে শেষে একটা কথা বলতেই হবে, সিনেমার মিউজিক বেশ ভালো। ফালতু গান নেই তা না। আছে, তবে সোনাবন্ধু বা এইজাতীয় কী জানি একটা গান ছিল..গানটার সুরটুর বেশ ভালোই।

এই ছিল তুমি ছাড়া বাচিনা দেখে আমার অনুভূতি। আর মন্তব্য- অযথা, অপ্রয়োজনীয়, অপচয়মূলক একটি সিনেমা। 

বি.দ্র.: এই লেখাতে সচেতনভাবে চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার অফ রাখা হয়েছে। তবে তা বানান বিকৃত করার উদ্দেশ্যে নয়। শুধুমাত্র শখের বশে। 
 www.facebook.com/naimferdous.ritom
 twitter.com/ritomish           

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন