যাই হোক কথা হচ্ছে কী আসলে এই তুমি ছাড়া বাচিনা। এটি একখানা ভয়ানক রোম্যান্টিক
সেই সালমান শাহ-ওমর সানীর আমলে বাংলা সিনেমাগুলো যেভাবে শুরু হতো, সম্ভবত ২০০৯ সালে নির্মিত তুমি ছাড়া বাচিনারও শুরু ঠিক একইরকম। সেই লোগ্রাফিক ক্রেডিটলাইন তো আছেই।
এই
তারপর বাচ্চাটা দৌড়াতে দৌড়াতে বড় হয়ে গেল। একদম বড় না, ১০-১২ বছর হবে (ভুলও হতে পারে আমি বয়স বুঝতে পারি না; একটু বয়সান্ধ টাইপ আছি আর কী)। এরমধ্যে বাচ্চা হারানোর শোকে তো অস্থির হুমায়ুন ফরিদী। সে গিয়ে কাজ নিল বড়লোক এক শিল্পীর বাসায়- যার মেয়েই এই সিনেমার নায়িকা।
ভাগ্যের খেলায় একদিন হঠাত টেলিসামাদ সেই বাসার সামনে এসে হুমায়ুনকে বললো, তার ছেলেটাকে কাজ দিতে। হুমায়ুন রাজি হয়ে গেল। রাজি হয়ে গেল বাসার মালিকও। তারপর মালিকের মেয়ে আখি আর নয়ন তো বন্ধু হয়ে গেল। এবার হঠাত অসুস্থ আখি। তার লাগবে রক্ত। কে দেবে, কে দেবে করতে নয়ন ভয়াবহ কিছু ডায়লগ ঝেড়ে ডাক্তারকে রাজি করিয়ে ফেললো রক্ত দেয়ার জন্য।
এই
এবার বড় হয়ে গেল জীবন আর আখি। চড়-থাপ্পড়, শত্রুতা, জোর করে চুমাচুমি এইসব টিপিক্যাল সিনেমাগুলোতে যা হয় আর কী। তারপর জীবনের গান শুনে তো আখি অবাক- পুরাই টিনের চালে কাকের মতো। এবার হাল্কা হাল্কা প্রেম। তারপর গাড় প্রেম। ততদিনে আখির প্রতি প্রেম জেগে উঠেছে আর এক বড় ব্যবসায়ীর, সে সম্ভবত আখির ক্লাসমেটও।
তো এই লোক শত্রুতা করে জীবনকে লম্পট সাজিয়ে দিল আখির চোখে। জীবন তো এবার মদ খেয়ে পুরাই মাতাল। ঠেকাই কে? এরমধ্যে আবার জীবন একদিন আখিদের বাসায় গিয়ে চিনে ফেললো এই আখি তো তার 'ছোটবেলার খেলার সঙ্গী'। তাই আখির বাপের ৫০ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ শোধ করে দিল জীবন। এই ঋণ আবার ২০ বছর আগে আখির বাবা নিয়েছিল; যা চুরির দায়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল ততকালীন নয়নকে।
এবার আবার অসুস্থ আখি। এবার তার দুটি কিডনিই শ্যাষ। কে দেবে কিডনি কে দেবে কিডনি করতে করতে রাজি হয়ে গেল জীবন। তখন আবার মদ খেয়ে খেয়ে জীবনের গলায় ইনফেকশন হয়ে গেছে। ডাক্তার তো তাই রাজি না।
শেষ পর্যন্ত ডাক্তারও রাজি হয়ে গেল। কিডনি দেয়া হয়ে গেল। আখি সুস্থ হয়ে গেল। জীবনের আসল পরিচয় পেল। প্রেম আবার শুরু হয়ে গেল। সিনেমা শেষ। দ্যা এন্ড।
এখন এই সিরিয়াস গল্পের
একটা উদাহরণ দেয়া যাক। নয়ন আর আখি তখন ছোট। একটা গাছের সবপাশে গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে ওরা ধরাধরি খেলছে। হঠাত অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল আখি। নয়ন তাকে টেনে তুললো। এবার আখি- 'আমার কিছু হলে তুমি এতো অস্থির হয়ে যাও কেন নয়ন?' এবার নয়ন- ডায়লগটা হুবুহু আমার মনে নেই। তোমার লাগলে ব্যাথা যে আমাকে বেশি কষ্ট দেয় জাতীয় কিছু একটা জবাব দিয়েছিল ব্যাটা। টোটাল ইচড়ে পাকা।
হাস্যকর দৃশ্যের তো কমতি ছিল না ওখানে। উদা- জীবন আর আখির ছোটকালে রক্ত দেয়া-নেয়ার সময়টাতে দেখা গেল সবাই অপেক্ষা করছে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে। আরে শালা অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন হয়। কেউ রক্ত দেয় না।
আর একটা দৃশ্যে দেখা যায়, আখি- তখন বড় হয়ে গেছে- একটা পার্ক জাতীয় কোথাও বসে জীবনের জন্য অপেক্ষা করছে। এইসময় দুষ্ট লোকেরা এসে আখিকে উত্যক্ত করতে শুরু করে।
আখি- কী চাও?
দুষ্ট লোকেরা- চাই তো পাহাড়ি ফুল।
আখি- তাহলে পাহাড়ে যাও। (যে এক্সপ্রেশন দিয়ে এই ডায়লগটা আখি দিল আমি তো পুরাই ফ্যান হয়ে গেলাম।) ২৪ ঘণ্টা পরও এই দৃশ্যটা মনে পড়লে হাসি আসছে।
প্রায় শেষের দিকে একটা দৃশ্যে দেখা যায় ফরিদী তার ছেলে জীবনের উপর রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বাইরে গিয়ে একটা সিএনজির ধাক্কা খেয়ে হুমায়ুন তার কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ওইদিনই বা ঠিক তার পরদিনই আবার হারানো ক্ষমতা ফিরে পায় সে। কী প্রয়োজন ছিল এই দৃশ্যের তাও আমি বুঝিনি।
যাই হোক সব মিলিয়ে বস্তা বস্তা ইমোশনের ছড়াছড়ি, বাংলা ১ম পত্রের মতো ভাষা আর সখিটখি মেলালে ২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের এই
তবে শেষে একটা কথা বলতেই হবে, সিনেমার মিউজিক বেশ ভালো। ফালতু গান নেই তা না। আছে, তবে সোনাবন্ধু বা এইজাতীয় কী জানি একটা গান ছিল..গানটার সুরটুর বেশ ভালোই।
এই ছিল তুমি ছাড়া বাচিনা দেখে আমার অনুভূতি। আর মন্তব্য- অযথা, অপ্রয়োজনীয়, অপচয়মূলক একটি সিনেমা।

বি.দ্র.: এই লেখাতে সচেতনভাবে চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার অফ রাখা হয়েছে। তবে তা বানান বিকৃত করার উদ্দেশ্যে নয়। শুধুমাত্র শখের বশে।
www.facebook.com/naimferdous.ritom
twitter.com/ritomish
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন